টেক কোম্পানির আয় কমায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে পতন

বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানকার পুঁজিবাজারেও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর আধিপত্য রয়েছে। ফলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসার উত্থান-পতনের প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার দরপতনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। মূলত প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ে ভাটা পড়ায় দেশটির পুঁজিবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিকে গত সপ্তাহে ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১৩৮, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৩৭ ও নাসডাক সূচক ২২৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। স্ন্যাপচ্যাটের প্রান্তিক আর্থিক ফলাফলে বিপর্যয়ের কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৪০ শতাংশ। এ সময় মেটা ইনকরপোরেশন ও আলফাবেট ইনকরপোরেশনের মতো কোম্পানি যারা অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করে তাদের শেয়ারদরেও পতন হয়েছে। এ কোম্পানি দুটির আর্থিক ফলাফল এ সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় অ্যাপল ইনকরপোরেশন, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনেরও আর্থিক ফলাফল প্রকাশিত হবে। ভেরাইজন কমিউনিকেশন মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার কারণে তাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমিয়েছে। অন্যদিকে ভালো আয়ের সুবাদে আমেরিকান এক্সপ্রেসের শেয়ারদর ও আয়ের প্রক্ষেপণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আমেরিকা অঞ্চলের ব্রাজিল, মেক্সিকো, কানাডা ও ভেনিজুয়েলার পুঁজিবাজারেও এ সময়ে নিম্নমুখিতা দেখা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর আয় যতটা খারাপ হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল ততটা হয়নি। কিন্তু সবাই এ কোম্পানিগুলোর যে ধরনের পারফরম্যান্স দেখে অভ্যস্ত তার তুলনায় গত কয়েক প্রান্তিকে আর্থিক ফলাফলে অবনতি হচ্ছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা এ সপ্তাহের ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিসংখ্যান প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতিকে বাগে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট থেকে বাড়াতে পারে। অন্যদিকে জিডিপি আবারো নেতিবাচক অবস্থানে যেতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এতে আগামী এক বছরের মধ্যে মন্দা আসার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি কী হতে পারে বাজার সেটি বোঝার চেষ্টা করছে।

ইউরোপে যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক গত শুক্রবার ৬ পয়েন্ট বেড়েছে। জার্মানির ব্লুচিপ সূচক ডিএএক্স ৭ পয়েন্ট এবং ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচকে ১৬ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, সুইডেন ও লুক্সেমবার্গের পুঁজিবাজার এ সময় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ার পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হয়েছে।

এশিয়ার অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক গত শুক্রবার ১১২ পয়েন্ট বেড়েছে। এ সময়ে ভারতের বিএসই সেনসেক্স সূচকে ৩৯০ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। ভিয়েতনামের হ্যাং সেং সূচক ৩৪ পয়েন্ট যোগ হলেও চীনের সাংহাই সূচক ২ পয়েন্ট হারিয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান, হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের পুঁজিবাজারেও পয়েন্ট যোগ হয়েছে। তবে নিম্নমুখী ছিল দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়ার পুঁজিবাজার।

গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান ও জর্ডানের পুঁজিবাজারে পয়েন্ট যোগ হয়েছে।