‘গার্মেন্টসে পুরুষের তুলনায় নারীরা চাকরি হারিয়েছেন বেশি’

নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবনে। কোভিডের তীব্রতা চলাকালীন সময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। আর এই চাকরি হারানোর ক্ষেত্রেও ছিল অসমতা। এই শিল্প খাতে পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন বেশি হারে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের উপর কোভিডের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের অ্যাবারডেন ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার।

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেন, রানা প্লাজার দূর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সামগ্রিক পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। রপ্তানিও বাড়ছে। মাঝখানে ভিয়েতনাম তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমাদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা তাদেরকে আবার পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছি। একদিন আমরা চীনকে পেছনে ফেলে এক নাম্বার স্থানে উঠে আসবো।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মতো আমাদের এখানেও অর্থনীতি ও জনজীবনে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা ও সবার সহযোগিতায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই প্রভাব কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার তৈরি পোশাকসহ সকাল খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্যান্য অধিকার শতভাগ নিশ্চিতে তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করবেন বলে উল্লেখ করেন।

বিশেষ অতিথি জালাল আহমেদ বলেন, অটোমেশনের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে চাকরি হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে। এমন অবস্থায় কেউ চাকরি হারালে যাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে সে লক্ষ্যে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, যাতে তারা নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

গবেষক সালমা আক্তার জানান, গবেষণাটি ছিল সাক্ষাতকার বা আলোচনা ভিত্তিক। গবেষণঅ চলাকালে তারা ১৩০ জন শ্রমিকের সাথে আলোচনা করেছেন, তাদের বক্তব্য ও মতামত নিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিজিএমইএ সভাপতি, শ্রমিক নেতা, সুশীল সমাজের সদস্যসহ আরও ৫০ জনের সাথে আলোচনা করেছেন তারা।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় এখানে কর্মপরিবেশ ভাল। বেশিরভাগ কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্ট। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার ৭টি বাংলাদেশে অবস্থিত। তারপরও কর্মপরিবেশের আরও উন্নতির সুযোগ আছে।

তিনি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা কমপ্লায়েন্স ও পণ্যের নিম্নমূল্যের বিপরীতমুখী চাপে আছেন। বিদেশি ক্রেতারা একদিকে সচেয়ে কম দামে পোশাক কিনতে চায়, অন্যদিকে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার জন্য চাপ দেয়। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা একেবারে প্রান্তিক অবস্থায়। তাদের কেউ কাজ হারালে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়। আবার শহরে ফিরে আসার মতো কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্পে তারা যে দক্ষতা অর্জন করেন, সেটি কাজে লাগিয়ে গ্রামে বিকল্প কর্মসংস্থান বা আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। তাই এই শ্রমিকদেরকে সরকার পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতার আনার ব্যবস্থা করা দরকার।