আ.লীগ নেতার ছেলেকে পেটালেন অনুসারীরা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বিকেল চারটার দিকে বসুরহাট মা ও শিশু হাসপাতালে অসুস্থ বোনকে দেখতে গেলে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরমান চৌধুরী।

হামলার পর হামলাকারীরা মা ও শিশু হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজও নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া হামলাকালে হাসপাতালের শয্যায় অসুস্থ আরমান চৌধুরীর মেয়ে ও হামলার শিকার ছেলের কাছ থেকে মোট পাঁচটি মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

গুরুতর আহত ইমন চৌধুরীকে (১৮) প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত আটটার দিকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হামলায় ইমন মাথা, পা ও হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় একাধিকার ফোন দিলেও ফোন ধরেননি মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। পরে প্রথম আলোর খুদে বার্তার জবাবে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। খুদে বার্তায় কাদের মির্জা লেখেন, ‘আমি সেখানে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। আমি পায়ের এক্স-রে করিয়েছি এবং ডাক্তার দেখিয়েছি। এ জাতীয় কোনো কিছু আমার জানা নাই। ভিত্তিহীন অভিযোগ।’

আরমান চৌধুরীবলেন, আজ সকালে তাঁর মেয়ে আজমা চৌধুরী বসুরহাট মা ও শিশু হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি সন্তান জন্ম দেন। তিনি মেয়েকে দেখে বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে ওই হাসপাতাল থেকে বের হন। একই সময় সেখানে বোনকে দেখতে যান তাঁর ছেলে বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র, ছাত্রলীগের কর্মী ইমন চৌধুরী (১৮)।

আরমান চৌধুরী জানান, তিনি হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার প্রায় পাঁচ মিনিট পর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তিনটি গাড়িযোগে দলবল নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। এ সময় কাদের মির্জার নির্দেশে তাঁর সঙ্গে থাকা অনুসারীরা তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। হামলাকারীরা তাঁর মেয়ে ও ছেলের কাছ থেকে পাঁচটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

আরমান চৌধুরী আরও অভিযোগ করেন, কাদের মির্জা ও অনুসারীরা হাসপাতালে থাকা তাঁর অসুস্থ মেয়ে ও স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। পরে লোক পাঠিয়ে কাদের মির্জা হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজও নিয়ে যান। এর আগে বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনের সময়ও তাঁকে নানাভাবে কাদের মির্জা হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বসুরহাট মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন ওরফে সুমন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি সেভাবে বলতে পারছেন না। মেয়র কাদের মির্জার প্রতি মাসে চেকআপ করানোর জন্য এখানে দু–একবার আসেন। আজ মেয়র আসার পর তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে মেয়রের চেকআপ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। পরে বের হয়ে এসে দেখেন, একটা ছেলে আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি তাৎক্ষণিক তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। তবে ওই ছেলেকে কারা মেরেছেন, তা তিনি জানেন না।

আরমান চৌধুরী বলেন, তিনি বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের অনুসারী হওয়ার কারণে তাঁর ওপর হামলার উদ্দেশ্যে কাদের মির্জা সেখানে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছেলের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার পরপরই তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে ঘটনাটি জানিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, বসুরহাট মা ও শিশু হাসপাতালে আরমান চৌধুরীর ছেলের ওপর হামলার ঘটনা তিনি শুনেছেন। তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।