শেখ রাসেল একটি সম্ভাবনার প্রতীক

১৯৭৫ সালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ছিল ইতিহাসের এক নির্মম ঘটনা। এর মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম ঘটনা হলো বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র ১০-১১ বছরের শিশু শেখ রাসেলের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। এ থেকে বোঝা যায়, যারা সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল, তারা ছিল নরপিশাচ। আমরা বুঝতে পারি, তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিদের কেউ যেন বেঁচে না থাকে। সে কারণে তার তিন পুত্রকেই সেদিন তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, তাদের খায়েশ পূরণ হয়নি। বিধাতা অন্যরকম সমাধান দিয়েছিলেন এ জাতির জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান। আমরা সবাই জানি, বাঙালি পরিবারে বড়বোনের কাছে ছোটভাই সবচেয়ে আদরের ধন হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ছিল না। ফলে ছোটবোন রেহানা ছাড়া পরিবারের আপনজন সবাইকে হারানো, বিশেষ করে ছোট্ট শিশু রাসেলকে বুলেটের আঘাতে হারানোর বেদনা তার জন্য এক দুঃসহ বোঝা। গত ৪৬ বছর ধরে তিনি এই বিশাল বেদনার ভার বহন করে বাংলাদেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। কেবল তা-ই নয়, তার দূরদর্শী ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ’৭৫-র ঘাতকদের বিচার ও অধিকাংশের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। এভাবে তিনি হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলেন, ইতিহাসের দায় পূরণ করলেন এবং জাতির কলঙ্ক মোচন করলেন। তার এ ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।

১৯৭৫ সালে ১১ বছরের শেখ রাসেল চিরতরে হারিয়ে গেছে। এর পর অন্যদের সঙ্গে সেও রয়েছে স্মৃতির অংশ হয়ে। তবে তার যেহেতু জীবন প্রভাতেই প্রদীপ নিভে গিয়েছে, তাই তার প্রবণতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। তবে নিশ্চয় বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারাবাহিকতায় তারও ইতিহাসে বলিষ্ঠ ভূমিক পালনের কথা ছিল। কিন্তু একটি সম্ভাবনা ঘাতকরা কুঁড়িতেই বিনষ্ট করেছে। তবে জ্যেষ্ঠ বোন শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেন, তার পুত্রসম এই ভাইটির কী অপরিসীম সম্ভাবনা ছিল। তাই তার আফসোসের শেষ থাকে না।

একটি সম্ভাবনাময় জীবন নিয়ে আমরা অনেক রকম পরিণতির কথা ভাবতে পারি। তবে তাকে তো আর ফিরে পাওয়ার উপায় নেই। ফলে আমাদের এখন দ্বিমুখী দায়িত্ব রয়েছে। একদিকে যে চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য ঘাতকরা সেদিন সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তা যেন কোনোভাবে এ দেশে পূরণ হতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, নানা ছুতায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন করে তোলার চেষ্টা চালায় কোনো কোনো মহল। তাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে। অতিসম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব পালনের সময় এ অপশক্তির কিছু কিছু তৎপরতা দেশের নানা স্থানে লক্ষ করা গেছে।

বলা যায়, ঘাতকদের প্রেতাত্মারা বাংলাদেশে এখনো সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা নবপ্রজন্মের শেখ রাসেলদের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে যারা বাংলাদেশকে সঠিক আদর্শে দেখতে চায়, তাদের সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই। অন্যদিকে শেখ রাসেল এবং সেদিন নিহত হওয়া অন্যদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা জরুরি। বিশেষ করে শেখ রাসেলের কথা এই কারণে বলা, এই বালক বস্তুতপক্ষে একটি সম্ভাবনার প্রতীক। সেই সম্ভাবনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। যদি বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হয়, তা হলে সেই চেতনা শানিত করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। শেখ রাসেলের স্মৃতি সংরক্ষণের মাধ্যমে তার জীবনের সম্ভাবনার কথা কল্পনা করে বাংলাদেশের সঠিক যাত্রাপথ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। নিষ্পাপ, নিষ্কলঙ্ক বালক একটি আদর্শের প্রতীক হিসেবে পবিত্র ও সুন্দর তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশের জন্য এ সময়ে পবিত্র সৌন্দর্যের সাধনা জরুরি। কেননা আমরা উদ্বেগ ও সংশয়ের সঙ্গে লক্ষ করি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরেও আদর্শ বিচ্যুতি এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপস করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এককভাবে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বিঘেœ জাতিকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না। অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত রাখার জন্য এ মুহূর্তে প্রয়োজন আদর্শিক চেতনার পবিত্র সুন্দর বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই বার্তার প্রেরণ আসতে পারে নিষ্পাপ বালক শেখ রাসেলের উৎসর্গকৃত জীবন থেকে। া