মোঃ রফিকুল ইসলাম :
মানুষ সামজিক জীব। সামাজিকতা রক্ষা করাই মানুষের কর্তব্য। মানব ইতিহাসের বিবর্তনের মাইলফলক। ৪০০০০০ বছর আগে: নিয়ানডার্থল- যারা বিবর্তনের দিক থেকে আমাদের আত্মীয়-দেখা দিতে শুরু করে এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ৩০০০০০ থেকে ২০০০০০ বছর আগে: হোমো স্যাপিয়েন্স- আধুনিক মানুষ- আফ্রিকায় দেখা যায়। ৫০০০০ থেকে ৪০০০০ বছর আগে: আধুনিক মানুষ ইউরোপ বসতি শুরু করে। (সংগৃহীত)
আদি যুগে মানুষ ঘর বাড়ী নির্মাণ করতে জানতেন না। মানুষ পোশাক তৈরী করতে পারতো না। তবুও মানুষের মধ্যে লজ্জা ছিল। তারা গাছের বড় বড় পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করতেন। আবার কেউ কেউ পশুর চামড়া পরিধান করতেন। মানুষ বনে জঙ্গলে বসবাস করত। বন জঙ্গল থেকে পশু পাখি স্বীকার করে জীবিকা নিবারণ করতেন। ফল-মুল খেয়ে জীবন ধারন করেছেন।
মানুষ রান্না-বান্না করতে জানতো না। ধীরে ধীরে আগুনের ব্যবহার রপ্ত করেছেন। ফলে মানুষ রান্না-বান্না শিখেছে। যদিও রান্নার হাড়িপাতিল ছিল না। তবুও মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মাছ, মাংস খেয়েছেন। মানুষ এক সময় সমাজ বুঝত না। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে সামাজিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সময় মানুষ লেখা পড়া জানতেন না। আস্তে আস্তে লেখা পড়া শিখে সভ্য সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে।
মানুষ ঘর-বাড়ী নির্মাণ করতে শিখেছেন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ নির্মাণ করেছেন। গোত্রে গোত্রে বসবাস করা, বিয়ে স্বাদি সবই মানুষ রপ্ত করেছেন। কাপড় তৈরী করা শিখেছেন। জামা-কাপড় পরিধান এবং বেশ-ভুষণ সবই মানুষ ধীরে ধীরে জয় করেছেন। এখন মানুষের মধ্যে একটা পূর্ণাঙ্গ সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, আইন-কানুন সবই মানুষ রপ্ত করে নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রয়োগ করেছেন। মুদ্দা কথা আজ আমরা মানুষ।
মানুষের হাতের মুঠোয় পুরো বিশ্ব। মানুষ পাহাড় পর্বতে যাচ্ছে। নদ-নদী, সমুদ্র মহা-সমুদ্র পারি দিচ্ছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছে। মুদ্দা কথা মানুষ সবই জয় করতে পেরেছে। বিজ্ঞান মানুষকে অনেক কিছু দিচ্ছে। মানুষ আজ চাঁদে যাচ্ছে, মোঙ্গলে যাবে সেই চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে মিনিটের মধ্যে মানুষ বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে তা মুহুর্তের মধ্যে জেনে যাচ্ছে।
এক কথায় মানুষ আজ মডারেট। মানুষের মধ্যে জ্ঞান গরিমা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একে অপরের সাথে কিভাবে আচার আচরণ করবে তাও মানুষ শিখে ফেলেছে। ভাষাগত জড়তা নেই, পুরো বিশ্বের সকল জাতির ভাষা মানুষ বুঝতে পারে, বলতে পারে ও লিখতে পারে।
আজ মানুষ সভ্যতার উচু শিখড়ে অধিষ্ঠিত। এক সময় কথা কথায় মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের মধ্যেযুদ্ধ বিগ্রহ হতো। আজ সেটা নেই। বিশ্ব রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ আছে। বিশ্ব আইন আদালত আছে। জাতিসংঘ আছে। স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে কখনো কোন কিছু নিয়ে কোন রকম বিরোধ দেখা দিলে জাতি সংঘের মাধ্যমে মিমাংসা করা হয়। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সভ্যতা বিরাজিত।
আজ আমরা সভ্যতার মধ্যে থেকেও সভ্যতার নামে কি করতে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি। আমরা সভ্যাতার মুখোসে কোথায় নেমে যাচ্ছি।
সাম্প্রতিক কিছু অনাকাংখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু লিখার চেষ্টা মাত্র। মানুষের জীবনকে উপভোগ, আনন্দ, উল্লাস করার নামে নিজেদের সর্বোচ্চ সম্ভ্রম, মান-সম্মান ধুলায় মিশিয়ে মানুষে সামনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। বুদ্ধিমান ও সামাজিক জীব হয়ে মানুষের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করা যায় না।
বিশ্ববাসী যে দেশকে আধুনিক সভ্যতার শিখড় মনে করেছি সেই বৃটেনে আধুনিকতার মুখোসে নগ্ন হোটেল বানিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ঐ সকল হোটেলে ঢুকতেই শরীর থেকে পুরো পোশাক খুলে নগ্ন হয়ে ঢুকতে হবে। নগ্ন হয়েই খেতে হবে।
বৃটেন ও বৃটেনের বাইরে এমন অনেক নগ্ন পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। মানুষ তাদের ঐ সকল স্পটে চলে যাচ্ছে পোশাকমুক্ত হয়ে। এসব যারা করে যাচ্ছে তাদের যুক্তি অন্যরকম। তারা বলেছেন, এটা নাকি পরিবেশবান্ধব আবার কেউ কেউ বলেছেন শরীরের শিল্পকে বিকশিত করার জন্য এটা করেছেন। আবার কেউ বলেছেন শরীরের প্রতি মর্যদা প্রদর্শনের জন্য তারা এসব করেছেন।
বৃটেনের দেখাদেখি স্পেনেও পোশাকবিহীন বিচরণ করছেন। সেখানে একটি জোন বা এলাকাকে প্লেয়া ন্যাচারিস্ট জোন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে সারা বছরই নগ্ন পোশাকে বিচরণ করেন যুবক-যুবতী। এক কথায় পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এই নগ্নতা রয়েছে। এসকল দেশের মানুষ মনে করে নব-বিবাহিত যুগল প্রকাশ্যে পোশাকবিহীন হানিমুন করে থাকে। তারা এমনও মনে করেন নব-দম্পতির ভিন্ন রকম এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিৎ। সেখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই নগ্ন হতে পারেন। এমন কি ঐ সকল দেশে নগ্ন রিসোর্ট রয়েছে। সেখানে কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। কিন্তু সেখানে প্রকাশ্যে যৌনতায় লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ। যদি কেউ প্রকাশ্যে যৌনতায় লিপ্ত থাকে তাহলে তাদেরকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হবে। এমনকি সর্বোচ্চ পনেরো হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
তাদের সেখানে এমনও দেখা গেছে কেউ যদি পোশাকবিহীন সাইকেল চালিয়ে বের হয় তারা তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। তারা পোশাকবিহীন শরীরের পজেটিভ দিকগুলোকে তুলে ধরেন। এছাড়াও তারা পোশাকবিহীন ফেস্টিভালের আয়োজন করেন এবং এ সময় সেখানে তারা নানা ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত হন।
আমরা মুসলিম জাতি। আমরা বাঙ্গালী জাতি। আমাদের ধ্যান-ধারনা, পোশাক-আসাক, চাল-চলনে রয়েছে শালীনতা। আমাদের দেশে রয়েছে রক্ষণশীলতা। প্রতিটি পরিবার তা পালন করেন। অপ্রিয় হলেও সত্য আমরা আজ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে নিজেদের সত্ত্বা ভুলে গিয়েছি। আমরা পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের পোশাকে কিছুটা পরিবর্তন এনেছি।
কাক ময়ূরের নাচন নাচতে গিয়ে নিজের নাচন ভুলে গিয়েছে। আমরা ঠিক কাকের মত পশ্চিমাদেরকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমাদের মুসলিম সত্ত্বা ভুলে যাচ্ছি। পশ্চিমারা এতকিছু করার পরও ওদের মধ্যে যৌনতা নেই যদি কেউ করে ধরা পড়লে পনেরো হাজার জরিমানা। তাই আর্থিক জরিমানার ভয়ে ভুলেও প্রকাশ্যে যৌনতা করে না।
একটা মাঠে সবাই যদি পোশাকবিহীন নগ্নতায় থাকে কেউ কারো দিকে তাকাবে না। আবার রাস্তা দিয়ে কেউ হেটে যেতে যেতে মনে করবে এরা পাগল বা বিকারাগ্রস্থ। তাই তাদের প্রতি কোন দৃষ্টি পড়বে না।
আমাদের দেশে যদি কোন বাজারে, মাঠে-ঘাটে, রাস্তায় বা কোন পার্কে কেউ যদি পোশাকবিহীন থাকে কেউ কিন্ত তার প্রতি দৃষ্টি দেবে না। কারন সবাই মনে করবে পোশাকবিহীন মানুষটি পাগল বা বিকারাগ্রস্থ। তাই তার দিকে কেউ তাকাবে না।
তবে আমাদের দেশে বর্তমানে ইভটিজিং, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। এর কারণ হলো আমরা পশ্চিমা পোশাক পরিচ্ছেদ, চালচলনে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমাদের মতো পুরো নগ্ন হচ্ছে না। অর্ধেক ঢেকে রাখে আর অর্ধে বের করে রাখার কারণেই তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের কু-দৃষ্টি পরে এবং আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তখন মানুষের মনের মধ্যে শয়তান এসে বাসা বেধে এবং তাদের প্রতি কুনজর পরে। মনে রাখতে কোন নগ্ন পাগলের দিকে মানুষের খারাপ দৃষ্টি কখনই যায় না।
একটা উদাহরণ: ধরুণ রাস্তার পাশে লোভনীয় মিষ্টি রেখে দেয়া হলো কেউ কিন্তু ফিরেও তাকাবে না। পক্ষান্তরে কোন মিষ্টির দোকানে গেলে মিষ্টি দেখলে যে কারো জিবে পানি আসতে পারে। আবার হুলদ পুক্ত পাকা একটি কলার ছরি থাকে সবাই চাইবে কলাটি পছন্দ তাই সবাই কিনতে চাইবে। আর যদি ঐ কলাগুলি ছুলে কোন পাত্রে রেখে দিকে কেউ কিনবে? নিশ্চয় কিনবে না। তাই আমাদের দেশের পোশাকবিহীন পাগলের উপর কারো দৃষ্টি যাবে না বরং তাকে সরানোর চেষ্টা করবে। পক্ষান্তরে অর্ধেক ডেকে আর অর্ধেক ওপেন করে রাখা হলে সবার মনেই যৌনতার সঞ্চার হবে।
তাই আসুন আমরা পশ্চিমা পোশাক, ধ্যান, ধারনা পরিহার করি এবং শালীনতা অবলম্বন করি। আমরা সবাই মুসলিম পোশাক পরিধান করি। শালীনভাবে চলাচল করি। তবেই আমাদের দেশ থেকে ইভটিজিং ও ধর্ষনের মতো গহির্ত কাজটি কমে আসবে।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম
একান্ত সচিব, সিইও এবং চেয়ারপার্সন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স্ কোঃ লিঃ