জিনান মাহমুদ :
বীমা আইন লঙ্ঘন করে ‘অতিরিক্ত কমিশন গ্রহণ, বাকি ব্যবসা, ডামি নিয়োগ দেখিয়ে অর্থ লোপাট’- এমন অনেক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লোকাল অফিসের শাখা প্রধান মো. আনোয়ারুল হোসেন এর বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালে মো. আনোয়ারুল হোসেন কিছুদিন প্রতিষ্ঠানের ‘ভারপ্রাপ্ত এমডি’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এরপর তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লোকাল অফিসের শাখা প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
‘ভারপ্রাপ্ত এমডি, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লোকাল অফিসের শাখা প্রধান’- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ তাকে বেপরোয়া করে তোলে। তিনি বীমা আইন লঙ্ঘন করে বাকি ব্যবসা, অতিরিক্ত কমিশন এবং প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অমান্য করে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসা করেছেন। অতিরিক্ত কমিশন কিংবা ডামি নিয়োগ- নানা অজুহাতে কোম্পানি থেকে অর্থ হাতিয়েছেন। তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়ে আইন বহির্ভূত বাকি ব্যবসার একাধিক চিঠিও এসেছে অর্থবাংলার কাছে।
দীর্ঘ ২২ বছর চাকুরীরত অবস্থায় তাঁকে প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্যবার বীমা আইন পরিপালনে চিঠির মাধ্যমে সর্তক করা হলেও তিনি প্রায় ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলেছেন। সবশেষ সম্প্রতি কোম্পানীর সিদ্ধান্তের বিপরীতে ব্যবসা পরিচালনার বিষয়টি সামনে আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন কর্তৃপক্ষ। স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি-সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা অভিযোগ তীব্র হলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ।
ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর সিদ্ধান্তের ‘বিপরীতে বীমা পলিসি ইস্যু’ করার কারণে বোর্ড সভায় মো. আনোয়ারুল হোসেনকে চাকুরীচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ‘প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ এনে- গত ৬ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এরপর, ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো. আনোয়ারুল হোসেনকে ‘চাকুরীচ্যুত’ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাকীতে ব্যবসা না করার জন্য সিরিজ অব লেটার ইস্যু করলেও আনোয়ারুল তা কর্ণপাত করেননি। চিঠিতে, আনোয়ার এবং তার সহযোগীদের লোকাল শাখার বাকী প্রিমিয়ামের টাকা দ্রুত জমার দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।’’
অন্যদিকে, ৬ ডিসেম্বর ডিসেম্বর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠান থেকে ‘পদত্যাগ’ করার ঘোষনা দেন মো. আনোয়ারুল হোসেন।
ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করার পর পদত্যাগ পত্র জমা দেয়াও আইনগত কোন বৈধতা নেই। এখানেও আনোয়ারুল হোসেন অপ-কৌশল গ্রহণ করেছেন। অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত করে স্থায়ীভাবে বরখাস্তর পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন হোসেন শামিম অর্থবাংলাকে বলেন- ‘‘দেশ, দেশের অর্থনীতি, বীমা খাত, গ্রাহক এবং শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় পুজিঁবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা আর্থিক অনিয়মে জড়িত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। অপরাধীর ঠিকানা হবে জেলখানা।’’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট মোহাম্মদ আবু সাইদ সিদ্দিকী টিপু অর্থবাংলাকে বলেন, ‘‘বীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। কিন্তু এ খাত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেতিবাচক। গুটিকয়েক মানুষের প্রতারণা, আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীন এই খাতটিতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে আইডিআরএকে আরো বেশি কঠোর ভুমিকা পালন করতে হবে। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ, সংক্ষুদ্ধ কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আইনী সাহায্য দরকার হলে, বীমা খাতের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে আমরা ‘ফ্রি আইনী সহায়তা’ প্রদান করবো।’’
মো. আনোয়ারুল হোসেন অর্থবাংলাকে বলেন, ‘‘আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তবে আমি একটি পদত্যাগ পত্র দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন।’’
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেন নি।
প্রিয় পাঠক, অর্থনীতি বিষয়ক জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থবাংলা’র অনুসন্ধান এবং একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে সদ্য বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, আর জাল-জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।
দীর্ঘ বছর ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড-এ চাকুরীরত থাকা অবস্থায় তিনি অনেক ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র নির্দেশনা, প্রজ্ঞাপন ও বীমা আইন লঙ্ঘন করে যেভাবে বীমা খাতকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বির্তকিত ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন, একইসঙ্গে নিজে শাস্তিযোগ্য অপরাধে জড়িয়েছেন- সেই তথ্য ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে পাঠকদের সামনে। থাকবে তার দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম নিয়ে একাধিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন। চোখ রাখুন- অর্থবাংলার পাতায় পরবর্তী নিউজের জন্য।