ন্যূনতম তিন বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক

দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কমপক্ষে তিন বিদেশী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করলেই সেই বাণিজ্য মেলাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলা হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে নতুন ‘মেলা পরিপত্র, ২০২২’-এ। এ নতুন পরিপত্র ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

নতুন পরিপত্র অনুযায়ী, এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনো মেলার আয়োজন করা যাবে না। কোনো স্থানে মেলা আয়োজন করতে গিয়ে ওই ভূমির শ্রেণীও পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া কোনো কারণে নির্ধারিত তারিখে মেলা আয়োজন করতে না পারলে আবেদনকারীকে পুনরায় ফি (মাশুল) দিয়ে আবেদন করতে হবে এবং তা নতুন আবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে। বাণিজ্য মেলা আয়োজনের খরচ বৃদ্ধি ও নতুন অনেক শর্ত জুড়ে দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন এ পরিপত্র জারি করেছে।

পরিপত্র অনুযায়ী, স্থানীয় পর্যায়ে বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজনে মেয়াদ অনুযায়ী আগে অতিরিক্ত কোনো ফি ছিল না। কিন্তু এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজনের আবেদনের সঙ্গে সরকারি কোষাগারে এক থেকে পাঁচদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা, আর ৬-১০ দিনের জন্য ১০ হাজার, ১১-১৫ দিনের জন্য ১৫ হাজার, ১৬-২০ দিনের জন্য ২০ হাজার, ২১-২৫ দিনের জন্য ২৫ হাজার এবং ২৬-৩০ দিনের জন্য ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের এক থেকে পাঁচদিনের জন্য মাশুল ৩০০ ডলার, ৬-১০ দিনের জন্য ৫০০, ১১-১৫ দিনের জন্য ৭৫০, ১৬-২০ দিনের জন্য ১ হাজার, ২১-২৫ দিনের জন্য ১ হাজার ৫০০ এবং ২৬-৩০ দিনের জন্য ২ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিপত্রে বাণিজ্য মেলা, স্থানীয় বাণিজ্য মেলা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আয়োজিত মেলায় পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে তাকে বাণিজ্য মেলা বলা হবে। তবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেলাকে বাণিজ্য মেলা বলা যাবে না। এগুলো মধ্যে রয়েছে বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তি মেলা, মহররমের মেলা, একুশে বইমেলা ও ঢাকা বইমেলা।

পরিপত্র অনুযায়ী স্থানীয় বাণিজ্য মেলা বলতে শুধু বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেশী পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য আয়োজিত মেলাকে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা বলা হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা আয়োজন করতে হলে কমপক্ষে এক মাস আগে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে। জেলা প্রশাসকরা সংশ্লিষ্ট চেম্বারের সুপারিশের ভিত্তিতে ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগের মতামত নিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য মেলা আয়োজনের অনুমতি দিতে পারবে। আর ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা আয়োজন করতে দুই মাস আগে আবেদন করতে হবে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ছাড়া দেশের যেকোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা করতে চাইলে দুই মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবেদন যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সন্তোষজনক মতামতের ভিত্তিতে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেবে। তবে ঢাকা ব্যতীত বাকি সাতটি বিভাগে ও তিন পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে এক মাস আগে আবেদন করতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, মেলায় আমদানি নিষিদ্ধ বা অবৈধ কোনো পণ্য মেলায় বিক্রি করা যাবে না। অশালীন, অসামাজিক ও অবৈধ কার্যক্রম মেলায় পরিচালিত হতে পারবে না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। দেশীয় পণ্য বা দেশীয় পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন মনে হলে সরকার মেলার অনুমতি বাতিল করে দেবে।

পরিপত্রের অনুলিপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, সব বিভাগীয় কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক, সব পুলিশ সুপার এবং এফবিসিসিআই ও দেশের সব ব্যবসায়ী চেম্বারের কাছে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।