দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ছাড়া কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবেনা

 

আবুল কালাম আজাদ :

‘আমল’ যাকে বাংলায় কাজ বলে। দাঁড়ি, টুপি বা পাগডী, লম্বা জামা বা তুব বা জুব্বা, হাতে তাসবিহ ও বুকে ঘাড়ে রুমাল এ অবস্হায় মসজিদে বা খানকায় আসা-যাওয়াকারীকে আমলদার বলে অভিহিত করি। কেউ কেউ পরহেজগারও বলে থাকি।

আমল মানে কাজ। কিসের কাজ, কার কাজ এবং কেনইবা কাজ? আপনি যদি একজন শ্রমিক নিয়োগ দেন আর উপরের তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেন তাহলে দাঁড়ায় কিসের কাজ? মনিব হিসেবে আপনি যে কাজ দেবেন সে কাজ। কার কাজ- মনিব হিসেবে আপনার দেখিয়ে দেয়া কাজ। কেন- কাজের বিনিময়ে মনিব কতৃক ধার্য্যকৃত মুজুরী বা পারিশ্রমিক।এক্ষেত্রে আপনি মনিব হিসেবে তাকে যে কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন শ্রমিক সে কাজই করে, আপনাকে মনিব হিসেবে মেনে নেয়া মানে আপনি যেভাবে করতে বলেছেন সেভাবেই করে । আপনার নির্দেশমতো কাজ না করলে আপনি তাকে পারিশ্রমিক দিবেননা অথবা আপনি নিষেধ করেছেন এমন কাজ করলেও পারিশ্রমিক দিবেননা অথবা আপনার শত্রু বা বিপরীত লোকের সাথে হাত মিলালে বা তার কথামতো চললেও পারিশ্রমিক দিবেননা।

মানুষ, পৃথিবী, সৌরজগত সব কিছুরই একজন মালিক রয়েছেন। তিনি আল্লাহ, তিনিই রব আবার তিনিই ইলাহ।মানুষ যদি আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাকে, রব ও ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে তবেইতো তার আদেশ-নিষেধ মানা জরুরী, না হলেতো নয়।

মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ এমনিতে ছেড়ে দেননি। মানুষের জন্য বিধান পাঠিয়েছেন। পাঠানো বিধান কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ব্যক্তিদের আল্লাহর বিধান মানতে হলে তা কেবল রাসুলদের দেখানো পথেই হতে হবে।এর বাইরের পথ যত আকর্ষনীয়ই হোকনা কেন তা পরিহার করতে হবে-আর এটাই আমল এবং সহীহ আমল।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) শেষ নবী। আমাদের যাবতীয় আমল রাসুল (সা:) এর দেখানো পথেই হতে হবে। না হলে সব বরবাদ হয়ে যাবে।

রাসুল (সা:) এর নবুয়্যাতি জিন্দেগীর বয়স তেইশ বছর। তের বছর মক্কায় আর দশ বছর মদিনায়।তেইশ বছরে প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে কোরআন নাজিলের মাধ্যমে বিধান পাঠানো হয়েছে।মানুষ রাসুল (সা:) কে অনুসরন করার মানে হচ্ছে ২৩ বছরের প্রতিটি বিষয়ই অনুসরন করতে হবে তথা মানতে হবে। বাংলাদেশের একজন মুমিন রাসুল(সা:)এর দেখানো পথে আমল করতে হলে বুঝতে হবে এজাতিয় পরিবেশে রাসুল (সা:) কি আমল করেছিলেন বা কি করতে বলেছিলেন বা রাসুলের (সা:) এর প্রতি সমাজ তথা রাষ্ট্রের আচরন কেমন ছিলো। একজন মানুষ যেখানে বসবাস করে সেখানকার অবস্হাকে রাসুল (সা:) এর জীবনের অবস্হার সাথে মিলিয়েই আমল করতে হবে, তা না হলে সেটা আমল হবেনা।

সামগ্রিকভাবে পর্যালাচনা করলে পৃথিবীর অবস্হা দু’রকম। দারুল ইসলাম আর দারুল হরব। যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আছে সেটা হচ্ছে দারুল ইসলাম। আর যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই সেটা দরুন হরব। দারুল ইসলামে মক্কা বিজয়ের পরের আমল জরুরী আর দারুল হরবে মাক্কী জীবনের আমল জরুরী। অর্থাৎ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন ঈমানদারকেও সে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। তখন সেটাই আমল।

শুরুতে উল্লেখিত বেশ-ভুষার তথাকথিত আমলদার বা পরহেজগার ব্যাক্তির নামায-রোজার বাইরের জিন্দেগী যদি আল্লাহর রাসুলের জিন্দেগীর বিপরীত হয় তাহলে তা আমল হিসেবে গন্য হবেনা। নামায-রোজার পাশাপাশি দারুল হরবকে দারুল ইসলামে পরিনত করার প্রচেষ্টাই মুলতঃ আমল তথা আউয়াল ফরজ। দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে কোন আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবেনা,হয়ওনি এবং হচ্ছেওনা।
আমাদেরকে বুঝার, অনুধাবন করার ও আমল করার তৌফিক দিন।

লেখক :

আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।