দেশের ২.১৫ কোটি লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত

 

বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ বা দুই দশমিক ১৫ কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। দেশের ১৩ দশমিক ছয় শতাংশ শিশুও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত রোগে ভুগছে। এর জন্য আমাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। প্রায় ১৮ বছর পর বাংলাদেশে এই জরিপ আবার সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের পলিসি তৈরি করতে আরও সুবিধা হবে।

এ অসুস্থদের প্রতি দুই লাখ লোকের জন্য মাত্র একজন করে সাইকিয়াট্রিস্ট আছেন। অর্থাৎ ২০০ জন সাইকিয়াট্রিস্ট রয়েছেন বাংলাদেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানসিক স্বাস্থ্য রোগের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। যা খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের অডিটোরিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ, বাংলাদেশ: ২০১৮-১৯’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্বিক সহযোগীতায় এ জরিপ অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেজওয়ানুল করিম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা প্রমুখ।

দেশের মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে চায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে দেশের সাধারণ জনগণ এখনও কুসংস্কারমুক্ত নয়। তারা ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করলে মানুষজন তাদের পাগল বলতে পারে। যে কারণে এ সংক্রান্ত ৯৪ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতায় আসে না।

 

অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে যা যা উপস্থাপন করা হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখনও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চালু হয়নি। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি মানসিক সমস্যায় ভোগেন। নারীরা এ ব্যাপারে একেবারেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে চান না। দেশে প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ১৩ দশমিক ছয়জন মানসিক সমস্যায় ভোগে। এর মধ্যে ছয়টি শিশু নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার, চার দশমিক পাঁচজন রাগান্বিত হয়ে, দুই দশমিক সাতজন না ঘুমিয়ে ও তিনজন কাছে কোনো বন্ধু না পেয়ে এ সমস্যায় ভোগে।

এছাড়া ৯৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশু চিকিৎসার আওতায় আসে না। আবার দুই হাজারের অধিক শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, গত ৩০ দিনে মানসিক সমস্যার কারণে ৪৯ দশমিক নয় শতাংশ শিশু অকারণে স্কুলে যায়নি, সাত শতাংশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজখবর নেননি ও দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশুর বাবা-মারা কোয়ালিটি টাইম দেননি।

জরিপে দেখা যায়, মানসিক সমস্যায় দেশের ১৬ দশমিক আট শতাংশ লোক ভোগেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পরিচালিত জরিপে এই হার ১৬ দশমিক দুইয়ে ছিল। এক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো চিকিৎসা ছাড়া থাকেন। আর ৫০ শতাংশ রোগী চিকিৎসক ছাড়া অন্যান্য মানুষের কাছে থেকে পরামর্শ নেন।