যেভাবে বিকশিত হলো তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড...
“তিনজনই মরহুম হয়ে গেছেন, অবশিষ্ট আছি আমি”

আবুল কালাম আজাদ :

২০০১ সালের এপ্রিল মাসে বিশেষ একটি দলীয় পরিচয়ের অজুহাতে ঐ দলেরই আশির্বাদে মোটাতাজা হওয়া তথাকথিত দ্বীনি ভাইয়ের গ্লিসারিন কান্নায় ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে বিতাড়িত হই। যে বোর্ড মিটিংয়ে আমি চাকুরীচ্যুত হই সে মিটিংয়ের পূর্ব মুহুর্ত্যে আমার কাছে একটি ফোন আসে, আমি যেন পরদিন দুপুর ১২টায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর ১৬ তলায় একজন পরিচালকের সাথে দেখা করি।

আমি চাকুরীচ্যুত হয়ে পরদিন ইসলামী ব্যাংকের ১৬ তলায় যার সাথে দেখা করি তিনি আর কেউ নন অধ্যাপক ফজলে আজিম। আমি ওনাকে ১৯৭৬ সাল থেকে চিনি। ওনার আলোচনা ও দারস আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। ঢাকা ডাইজেষ্টের নিয়মিত পাঠক হবার কারনে ওনার উচ্চমার্গের সাহিত্যবোধের পরিচয় আগেই আমার জানা ছিলো। বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর তিনি একটি ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দেন। সিয়ার্স ইন্স্যুরেন্স লিঃ এর কিছু কাগজ-পত্র দিয়ে বললেন এ কোম্পানীকে গঠন কর।জনাব মো মফিজ উদ্দিন, মরহুম নুরুন ইসলাম আর মরহুম আবদুল্লাহ সাহেবের সহযোগীতায় কোন্পানী অনুমোদন পেল ও ব্যবসা শুরু করা গেলো। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারীতে সীয়ার্স ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু করলো।

 

আমার পরিকল্পনা ফজলে আজিম স্যারের অনুমোদনে তর তর করে তাকাফুল এগিয়ে যেতে লাগলো। স্যারের অনুমোদন নিয়ে ডেস্ক ও উন্নয়ন বিভাগে সৎ, আদর্শিক, কর্মক্ষম কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলো। স্যারের আর আমার শয়নে-স্বপনে তাকাফুল আর তাকাফুল।স্যার ও আমি নিজেদের স্ত্রী-পুত্রের চাইতেও বেশী কেয়ার করতাম। তিনি সুদীর্ঘ ১২ বৎসর কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কোম্পানী ইতোমধ্যে আর্থিক ভিত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সারাদেশে ও বীমা শিল্পে একটি অবস্হান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। তৃতীয় প্রজন্মের কোম্পানী হয়েও প্রথম প্রজন্মের কোন্পানীর সমকক্ষতা অর্জনে কোন অসুবিধা হয়নি।
১২ বছর পরেই শুরু হলো বিপত্তি। ১২ বছর পর্যন্ত ছোট-বড় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হলেও পরিচালনা পরিষদের সময়োচিত পদক্ষেপে বিশেষকরে সকলের শ্রদ্ধেয় মুরব্বিখ্যাত পরিচালকের বিজ্ঞচিত পরামর্শে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়নি। ফজলে আজিম সাহেবের সরলতার সুযোগে, আশ্রিত ২/১জন জগতশেঠের সহযোগীতায় জগদ্দল পাথর চেপে বসলো। পর্যায়ক্রমে জগতশেঠের সহযোগীতায় স্যারের শেয়ারগুলো হাতিয়ে নিলো, নিক্ষেপ করলো আস্তাকুডে। আর দাঁড়াতে দিলোনা, করে দিলো নিজের ঘরে পরবাসী। মাঝে মাঝে রাগ করে বলতাম, একটা ছেলেকে জন্ম দিয়ে, ১২,বৎসর পর্যন্ত লালন-পালন করে গলাচিপে হত্যা করলেন।

কোম্পানী গঠন করেও নিজে কোন লাভ ঘরে তুলতে পারেননি। গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খেয়ে ফেললো। বৈষয়িক ছিলেন না বলে হাতে টাকা-পয়সা থাকতোনা জগৎশেঠরা এ সুযোগটাই নিয়ে স্যারকে চরমভাবে ঠকিয়েছে। শেষে আফসোস করে বলতেন তোর কথা না শুনেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। জগৎশেঠরা তোর ব্যাপারে Misgide করেছে।

স্যার খুবই সহজ-সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। মালিক আর কর্মচারীর কোন সীমারেখা মানতেন না। চরম শত্রুকেও কটু কথা বলতে পারতেন না। ঝগড়া করার জন্যে ন্যুনতম এক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিতে হতো। কোন টেনশান করতেন না। সব সময় নির্লিপ্ত থাকতেন। স্যারের এতোবেশী ধৈর্য ছিলো যে পরিবারের কোন সমস্যাকেই গায়ে মাখতেন না।মানুষ চিনতে পারতেন না বলে অনেক ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছেন তারপরও খারাপ কথা বলতেন না।দোষ-ত্রুটি থাকলেও এমন মানুষ বিরল। আল্লাহ তাঁর দোষ-ত্রুটি সমুহ ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করুন।

মরহুম অধ্যাপক ফজলে আজিম, মরহুম নুরুল ইসলাম , মরহুম মোঃ আবদুল্লাহ আর আবুল কালাম আজাদ মিলে তাকাফুলকে বিকশিত করা হয়েছে। তিনজনই মরহুম হয়ে গেছেন অবশিষ্ট আছি আমি। আমার জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই আমি যেন হকের উপর দৃঢ থেকে ঈমানের সাথে খোদার ডাকে সাড়া দিতে পারি।

 

লেখক : আবুল কালাম আজাদ

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।