এশিয়ার ধনিক শ্রেণীর গ্রাহক হারাচ্ছে পশ্চিমা ব্যাংকগুলো

এশীয় গ্রাহক কমায় আয় কমেছে ইউবিএস ও সিটি গ্রুপের। গ্রাহক কমার কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) আয় কমেছে বলে আগেই সতর্ক করেছিল ক্রেডিট সুইস গ্রুপ। গত বছর বেশ ভালো আয় করে পশ্চিমা ব্যাংকগুলো। এ বছর তার ব্যতিক্রম। এশীয় ধনকুবের ক্লায়েন্টদের লেনদেন কমায় ইউবিএস, সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আয় ব্যাহত হয়েছে। এতে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে চীনের লকডাউন পরিস্থিতি। খবর দ্য বিজনেস টাইমস।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার কারণে প্রযুক্তি, শিক্ষাসহ গেমিং ও সম্পদ শিল্পের বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। এতে করে লোকসানে পড়েন গ্রাহক। অথচ গত দশকজুড়ে সর্বোচ্চ সম্পদশালী গ্রাহক ছিল এশিয়ায়। তবে গত বছর মহাদেশটিকে পিছে ফেলে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। সম্প্রতি ক্যাপজেমিনির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মী সংকটের কারণে ঋণ দেয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছেন ঋণদাতারা।

নতুন ব্যবস্থাপকদের আয়ের লক্ষ্য অর্জনে সময়সীমা বাড়িয়েছে ক্রেডিট সুইস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে বাজার পরিস্থিতিতে সংকট দেখা দেয়।

এ বিষয়ে ইউবিএসের এশীয় প্যাসিফিক সম্পদের সহযোগী প্রধান কর্মকর্তা অ্যামি লো বলেন, বছরের প্রথমার্ধ আমাদের জন্য খুব কঠিন সময় ছিল। এ অস্থিতিশীলতা দীর্ঘদিন থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালের ঠিক বিপরীতটাই ঘটেছে এ বছর। ওই বছর সরকার নিজ উদ্যোগে বাজারে অর্থের জোগান দেয়। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির বিপরীতে সুদের হার বাড়িয়ে চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এতে করে মন্দার তীব্র আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫০ বছরের সর্বনিম্ন শেয়ারদর ছিল। বার্কলেস গত বছর জানায়, এশিয়াজুড়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

এদিকে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ঘন ঘন লেনদেন করে এমন ক্লায়েন্টদের সংখ্যাই বেশি এশিয়ায়। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের হাবে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ক্লায়েন্টদের সংখ্যাই বেশি। এশিয়ার সম্পদশালীরা প্রকৃতপক্ষে উদ্যোক্তা। তারা নিজেরাই নিজেদের অর্থপ্রবাহ পরিচালনা করেন। অন্যদিকে ইউরোপের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে অর্থ সঞ্চয়ের ভার দেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথমার্ধে এশিয়ায় ১০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকের ক্লায়েন্ট বাড়িয়েছে সিটি গ্রুপ।

এশীয় সম্পদ আয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অসম্মতি জানিয়েছে ক্রেডিট সুইসের এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, বাজারে স্বল্পমেয়াদি অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যাংকটি। এ বিষয়ে ইউবিএস ব্যাংক কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গত মাসে এক বিনিয়োগ সভায় ক্রেডিট সুইসের সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান কর্মকর্তা ফ্রানসেসকো ডে ফেরারি জানান, এশিয়ায় ক্লায়েন্টদের লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। জুরিখভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটি সম্পদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এক্ষেত্রে হংকং ও সিঙ্গাপুরের বাজারকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এ বছর নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়েছে চীনে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির প্রযুক্তি শিল্প খাত। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে আশাবাদী ইউবিএস। এর জন্য চীনের নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যামি লো। তবে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকগুলো।